🕋 ঈদুল আযহার আমল 🕋
ঈদুল আযহা মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এ দিনটি কুরবানির মাধ্যমে তাকওয়া ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের দিন। ঈদুল আযহার কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যেগুলো হাদীস ও কুরআনের আলোকে প্রমাণিত। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো:
🕋 ১. তাকবীর বলা
তাকবীর বলা ঈদের অন্যতম সুন্নত।
➡️ আল্লাহ বলেন:
“এবং যেন তারা নির্দিষ্ট দিনগুলিতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে।”
(সূরা আল–হাজ্জ: ২৮)
➡️ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত:
“রসূলুল্লাহ (সা.) আর সাহাবিরা কুরবানির দিনগুলোতে উচ্চস্বরে তাকবীর বলতেন।”
(বুখারী: ৯৭০)
🔊 তাকবীর পাঠের শব্দ:
اللّٰهُ أَكْبَرُ، اللّٰهُ أَكْبَرُ، لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ، وَاللّٰهُ أَكْبَرُ، اللّٰهُ أَكْبَرُ، وَلِلّٰهِ الْحَمْدُ
🕌 ২. ঈদের নামাজ আদায় করা
ঈদুল আযহার দিন ঈদের নামাজ আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
➡️ আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন:
“নবী (সা.) ঈদের দিন নামাজের জন্য বের হতেন এবং সবাইকে তাতে অংশগ্রহণ করতে বলতেন।”
(বুখারী: ৯৭৫)
🕖 সময়: সূর্য ওঠার পর থেকে যোহরের আগে পর্যন্ত।
🐐 ৩. কুরবানি করা
কুরবানি করা ঈদুল আযহার মূল আমল।
➡️ আল্লাহ বলেন:
“তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো এবং কুরবানি দাও।”
(সূরা কাওসার: ২)
➡️ হাদীসে এসেছে:
“যার কুরবানি করার সামর্থ্য আছে, কিন্তু সে কুরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।”
(ইবনে মাজাহ: ৩১২৩, সহীহ হাদীস)
📌 কুরবানির সময়: ঈদের নামাজের পর থেকে পরবর্তী দুই দিন পর্যন্ত (১০-১২ জিলহজ্জ)।
🚫 ৪. নখ, চুল না কাটা (কুরবানির আগে)
যারা কুরবানি দেবেন, তাদের জন্য সুন্নত হলো — জিলহজ্জ মাস শুরু হলে ঈদের নামাজ না হওয়া পর্যন্ত নখ ও চুল না কাটা।
➡️ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“যদি তোমাদের মধ্যে কেউ কুরবানি করতে চায়, তাহলে সে যেন চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে (যিলহজ্জের প্রথম দশ দিন)।”
(মুসলিম: ১৯৭৭)
🛁 ৫. গোসল ও পরিচ্ছন্নতা
ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে গোসল করা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরা সুন্নত।
➡️ হাদীস:
“নবী (সা.) ঈদের দিন গোসল করতেন।”
(ইবনে মাজাহ: ১৩১৫)
🍽️ ৬. ঈদের নামাজের আগে কিছু না খাওয়া
ঈদুল ফিতরের সময় খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নত, কিন্তু ঈদুল আযহার সময় খাওয়ার আগে ঈদের নামাজে যাওয়া উত্তম, যেন নামাজের পর কুরবানির গোশত দিয়ে আহার করা যায়।
🧑🤝🧑 ৭. আত্মীয়–স্বজন, গরিব–দুঃখীদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি
ঈদের প্রকৃত শিক্ষা হলো ত্যাগ ও সহমর্মিতা। তাই সমাজের অসহায় ও দুঃখী মানুষের সাথে কুরবানির গোশত ও আনন্দ ভাগ করে নেওয়া ঈদের অন্যতম উদ্দেশ্য।
🔚 উপসংহার:
ঈদুল আযহার প্রতিটি আমল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। এই দিনটি আমাদের ঈমান, তাকওয়া ও ত্যাগের বাস্তব পরীক্ষা। আসুন, আমরা আল্লাহর নির্দেশ পালনে যত্নবান হই এবং এই পবিত্র দিনটিকে যথাযথভাবে উদযাপন করি।
📚 সূত্র:
- সহীহ বুখারী
- সহীহ মুসলিম
- সূরা আল-হাজ্জ, সূরা কাওসার
- ইবনে মাজাহ
- ইসলামিক ফিকহ একাডেমি ফতোয়া